দেশে ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনছে সরকার। পাসপোর্ট ইস্যু বা রিনিউ প্রক্রিয়ায় আর পুলিশি ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে না। এর বদলে আবেদনকারীর এনআইডিতে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপ ও ছবির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পরিচয় যাচাই করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সাম্প্রতিক বৈঠকে দ্রুত এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত ভুয়া পাসপোর্টসহ জাল পরিচয়ে একাধিক পাসপোর্ট তৈরির প্রবণতা রোধ করতেই এই উদ্যোগ।


যেভাবে বদলে যাচ্ছে পাসপোর্ট যাচাই প্রক্রিয়া

  • ই-পাসপোর্ট এনরোলমেন্ট সেন্টারে আঙুলের ছাপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা এনআইডির আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।

  • ‘ফেস ভেরিফিকেশন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে এনআইডিতে থাকা ছবির সঙ্গে মুখাবয়ব মিলিয়ে দেখা হবে।

  • কোথাও তথ্য না মিললে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ দেখিয়ে আবেদনটি ম্যানুয়াল যাচাইয়ে পাঠানো হবে।

  • এতে জাল পরিচয়ে পাসপোর্ট নেওয়া এবং এক ব্যক্তি একাধিক নামে পাসপোর্ট বানানোর সুযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হবে।


কেন বন্ধ হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন?

সরকারের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী, অনলাইনে যাচাইকৃত এনআইডি বা জন্মসনদের তথ্যের ভিত্তিতেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। ফলে পুলিশের শারীরিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন থাকবে না।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, “এনআইডি নিবন্ধনেই পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক যাচাই সম্পন্ন হয়। একই ধাপ পুনরায় পাসপোর্টে করার যৌক্তিকতা নেই। ডেটা সমন্বয় হলে অপরাধ শনাক্ত আরও সহজ হবে এবং ব্যয় কমবে।”


নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে সতর্কতা

মানবাধিকার ও নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে— বায়োমেট্রিক তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল; তাই ডাটাবেইজ সুরক্ষা ও অপব্যবহার রোধে কঠোর আইন প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, ডেটা শেয়ারিং হবে এনক্রিপটেড চ্যানেলে এবং কোনো তথ্য অতিরিক্তভাবে সংরক্ষণ করা হবে না।


শিশুদের পরিচয় যাচাই কীভাবে হবে?

শিশুদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ না করেই তাদের ডিজিটাল জন্মসনদের ১৩ বা ১৭ সংখ্যার ইউনিক নম্বর ব্যবহার করে পরিচয় যাচাই করা হবে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এই অনলাইন যাচাই যথেষ্ট নিরাপদ।


কবে থেকে শুরু হবে নতুন ব্যবস্থা?

প্রযুক্তিগত সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাইলট প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে নতুন বায়োমেট্রিক যাচাই কার্যকর হতে পারে।

সরকার আশা করছে— স্বচ্ছ, দ্রুত ও নিরাপদ পাসপোর্ট ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে।